ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চেয়ে পশ্চাদপদতা অনেক বেশি। পরিসংখ্যা্নগুলো বিশ্লেষণ করলেই তা পরিষ্কার হবে। আজ আমাদের দেশ পাঁচ দশকের চরম বেকারত্ব ও ঘাতক মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হওয়ার কারণ কী?এর কারণ স্পষ্ট যে, সরকার পেট্রোলিয়াম, রেল ও পরিবহনের মতো সেবাকে আয়ের মাধ্যম বানিয়েছে। সরকার জনসেবা থেকে অর্থ উপার্জনে নিয়োজিত এবং দেশের সম্পদ সাধারণের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে মাত্র দুজনের হাতে তুলে দিচ্ছে। আজ, যদি পেট্রোল ১০০ টাকায় বিক্রি হয়, তবে এর মধ্যে ২৭ টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আবগারি শুল্ক হিসাবে নেয়। বেস প্রাইস প্রায় ৪৯ টাকা এবং রাজ্য সরকার ১০ থেকে ১৫ টাকা ট্যাক্স নেয়। অর্থাৎ সরকার পেট্রোল ডিজেলের জন্য জনগণের কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা নিচ্ছে। ২০১৪ সালের মে মাসে, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোলে 1১০.৩৮ টাকা এবং ডিজেলের উপর ৪.৫২ টাকা আবগারি শুল্ক নিত। আজ মোদী সরকার পেট্রোলে ২৭.৯০ টাকা এবং ডিজেলের জন্য ২১.৮০ টাকা চার্জ করে।
এই কারণেই অনেক রাজ্যে পেট্রোলের দাম ১০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং ডিজেলের দাম যা পেট্রোলের প্রায় অর্ধেক ছিল, আজ তা প্রায় পেট্রোলের সমান। গত আট বছরে, কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল এবং ডিজেলের উপর কর আদায় করে প্রায় ২৬ লক্ষ কোটি টাকা আয় করেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার এই যে আদায় করছে তার অর্থ কোথায় যাচ্ছে ? জনকল্যাণে লাগাচ্ছে ? জনগণের কাছ থেকে আদায় করা এই টাকা দিয়ে কি উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে? অন্য কোনো ফ্রন্টে কি জনগণকে স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে? মানুষ কি স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে? দুর্ভাগ্যবশত এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর হল – না। মোদি সরকারের আমলে মুদ্রাস্ফীতি এবং সাধারণ জনগণের আয়ের তুলনা করলে, গত তিন বছরে মাথাপিছু আয় ১.২৬ লক্ষ টাকা থেকে কমে ৯৯,১৫৫ টাকা হয়েছে, কিন্তু এই একই সময়ে, আবগারি শুল্ক থেকে সরকারের আয় বেড়েছে ২,১০,২৮২ টাকা থেকে ৩,৭১,৯০৮ টাকা। গত আট বছরে সরকারের সবচেয়ে বড় এককালীন ব্যয় হল, কর্পোরেটদের ১০ লক্ষ কোটি টাকা বাতিল করা এবং ৬ লক্ষ কোটি টাকার কর মওকুফ করা । গত আট বছরে প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা ব্যাংক জালিয়াতিতে ডুবে গেছে। সরকারের সাহায্য ছাড়াই জনসাধারণের অর্থের এই লুটপাট সম্ভব হতো না। একদিকে সরকার সেই অন্ধ পুঁজিবাদের প্রচার করছে যেখানে পুঁজিপতিরা সরকারি টাকায় সরকারি সম্পত্তি কিনছে আবার সরকার সেই সরকারি টাকা (ঋণ) মওকুফ করছে। সরকার একজনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাজন বানাতে নিয়োজিত থাকলেও অন্যদিকে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা সর্বোচ্চ কর দেন এবং দু-একজন মানুষ এর সুবিধা পান। উন্নয়নের এই প্রহসন আর কতদিন চলবে যেখানে ১৪০ কোটি মানুষের মূল্যে একজন ব্যক্তিকে ধনী করা হবে?একজন চাকুরীজীবী সাধারণ মানুষ প্রথমে তার উপার্জনের উপর ট্যাক্স দেন, তারপর ব্যাঙ্কে থাকা টাকা তোলার উপর ট্যাক্স দেন, পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য ডাল ভাতের ব্যবস্থা করতে ট্যাক্স দেন, কিসে ট্যাক্স দেন না ?তার মানে সাধারণ মানুষ ট্যাক্স ছাড়া তার প্রয়োজনীয় কোন কিছুই পান না। আর সরকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়ে তা জনগণের উন্নতির স্বার্থে না লাগিয়ে পুঁজির জন্যে পরিকাঠামোগত ব্যায় করে। অথচ দেখা যাচ্ছে ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় ১৫ জন পুঁজিপতির কাছ থাকে ইনকাম ট্যাক্স বাবদ কোন অর্থ আদায়ই হয়না । এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার ফল আজ ডাল, চাল, দুধ, দই, রুটি, গ্যাস সিলিন্ডার বা সহজভাবে বলতে গেলে যা কিছু জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয়, সবই করের আওতাভুক্ত এবং মূল্যস্ফীতি আকাশ ছোঁয়া–তারাশংকর