“মেয়েদের বেশি পড়াশুনা করা উচিত নয়, বেশি পড়াশুনা করলেই তারা অন্যায়ের সাথে জড়িয়ে পড়ে এবং তারা বাইরে যাওয়া শুরু করে। আর কলেজের অবস্থা সবাই জানে, সেখানে পড়াশুনার বদলে কী হয়।”
আসলে এ ধরনের কথাবার্তা আমাদের সমাজে নতুন নয়। আপনিও মাঝে মাঝে এমন কথা শুনেছেন। যেমন নারীদের রাতে একা বের হওয়া উচিত নয়। মহিলাদের ছোট পোশাক পরা উচিত নয় ইত্যাদি ।
কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি এটাও বলেন যে তারা এই কথা বলছেন কারণ তারা নারীদের প্রতি যত্নশীল, এই প্রশ্নটি এমন লোকদের জন্য যথেষ্ট যে যদি তাই হয়, তাহলে দিনের বেলায় ঘটে যাওয়া খারাপ আচরণের কী করবেন?
কিংবা সারা শরীর ঢেকে রাখা নারীর সঙ্গে অ্যাসিড হামলা বা ধর্ষণের মতো ঘটনা কেন ঘটছে?
মেয়েদের কারণেই এসব হচ্ছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কারণ দেখা যায়, এসবের পেছনে বেশিরভাগই পুরুষ যুক্ত।
তাহলে পুরুষের ওপর কেন সব বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো না?
এবার যুক্তি রাখা হবে, ‘না, পুরুষরা তো এমনই হয়।’ শুধু নারীদেরই এসব এড়িয়ে চলতে হবে।
আমি এখানে স্পষ্ট করে বলতে চাই যে শুধু পুরুষরাই এমন কথা বলেন তা নয়। এমন নারীও আছেন, যারা এ ধরনের কথা বলেন। পাশাপাশি এমন কিছু পুরুষ এবং মহিলা রয়েছে যারা এই সমস্ত বাজে কথার তীব্র বিরোধিতাও করেন।
পিতৃতন্ত্র একজন পুরুষ মানুষের স্বাভাবিক আচরণকে উপেক্ষা করে তার কাছ থেকে কিছু বিশেষ আচরণ আশা করে এবং তা করলেই তাকে একজন পুরুষ মানুষ হওয়ার উপাধি দেয়।
এখন আমরা যদি অনুসন্ধান করি যে, এ ধরনের বৈষম্য আসে কোথা থেকে? আর তা করলেও কেন শুধু নারীদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়?
এর তদন্তে আমরা দেখতে পাব যে এটি আমাদের সমাজে প্রচলিত মতাদর্শ থেকে জন্ম নিয়েছে, যা ‘পিতৃতন্ত্র’ নামে পরিচিত।
পিতৃতন্ত্র’ মানে ‘পিতার শাসন’ অর্থাৎ পরিবারের প্রধান হবেন পিতা এবং তার থেকেই বংশ নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু তা শুধু অর্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর চেয়েও ব্যাপক। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি সামাজিক ব্যবস্থা যা আমরা সমাজে কাঠামোগত এবং আদর্শগত উভয় রূপে দেখতে পাই।
কাঠামোগত নিদর্শন যেমন পুরুষতান্ত্রিক ভারতীয় পরিবার এবং আদর্শিক নিদর্শনগুলি উপরের উদাহরণগুলিতে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান, যার মধ্যে ‘পুরুষ শ্রেষ্ঠ এবং নারী নিকৃষ্ট’ ধারণা অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, এই মতাদর্শ সামাজিক-সম্পদ, সিদ্ধান্ত এবং অন্যান্য মতাদর্শে পুরুষদের বৃহত্তর প্রভাব নিশ্চিত করে।
আমরা যদি উপরে লেখা বিষয়গুলো দেখি, তাহলে দেখতে পাব যে পিতৃতন্ত্র পুরুষদের মূল্যবান উপহার দিয়েছে, কিন্তু এটা একটা দিক। এর অন্য দিকে তাকালে দেখতে পাব যে পুরুষতন্ত্রও পুরুষের জন্য এক ধরনের শাস্তি।
সেটা কিভাবে? তুমি একটা ছেলে,আমরা সবাই এই ‘বাক্য’র সঙ্গে পরিচিত। শৈশবে আমাদের এই কথা বলে অনেক কাজ থেকে দূরে থাকতাম, সেসব কাজে আমাদের যতই আগ্রহ থাকুক না কেন।
যেমন, আরে পুতুল খেলা তো মেয়েদের তুমি ছেলে হয়ে এই খেলা খেলছ?
রান্না করা মেয়েদের কাজ ছেলে হয়ে কি পারো?
গোলাপি রঙ তো মেয়েদের মানায় তুমি না ছেলে, ইত্যাদি ইত্যাদি
শৈশব থেকে মানুষ থেকে পুরুষ হওয়ার এই যাত্রা কীভাবে গড়ে ওঠে, আপনি আপনার চারপাশে চোখ চালালে নিজেই দেখতে পাবেন। এসবে তার নিজের স্বার্থ কোথায়? অনেক সময় শিশু বড় হওয়া পর্যন্ত তা বুঝতে পারে না। কারণ ছোটবেলা থেকে তাকে যেভাবে বলা হয় তার আশেপাশের বেশিরভাগ মানুষ তাই করে।
পিতৃতন্ত্র কি?
তুমি তো বাড়ির গার্জেন
এই কথাটা নিশ্চয়ই প্রায়ই শুনে থাকবেন প্রতিটি ঘরে জন্মানো পুরুষ মানুষেরা। বিশেষ করে যদি সে বাড়ির একমাত্র পুরুষ হয়। আশ্চর্যের বিষয় হল এই কথাটা যার জন্য বলা হচ্ছে তার বয়সের সাথে এরকিছু যায় আসে না। এই কথা বলার মধ্য দিয়ে পুরুষকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নেওয়া হয় যাতে হয়ত তার ইচ্ছেই থাকেনা।
উদাহরণস্বরূপ, বাড়ির একমাত্র পুরুষ যে, কোন বিয়ে বাড়ি থাকলে তাকে বাড়ির প্রধান হিসেবে যেতেই হয়। এমন পরিস্থিতিতে এই পুরুষতান্ত্রিক আদর্শ তার স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য করে।
আরে কি মেয়েদের মত কাঁদছ ?
বাড়ির প্রতিটি মহিলার দায়িত্ব তোমার- পিতৃতান্ত্রিক আদর্শ তাকে দায়িত্বের ভার চাপিয়ে দেয়। ছোটবেলা থেকেই তাকে শেখানো হয় তোমার বোন তোমার দায়িত্ব, তার খেয়াল রেখো, এছাড়া একজন পুরুষের জন্মগত দায়িত্ব হয়ে উঠেছে বাবা মাকে দেখা, সে নিজে এসবের জন্য প্রস্তুত থাকুক বা না থাকুক। অনেক সময় এসব দায়িত্বের ভারে একজন পুরুষ নিজেকে একটা যন্ত্রের মতো মনে করতে থাকে যার কাজ শুধু নারীর চাহিদা মেটানো। বিয়ের পর পরিবারের প্রধান হয়ে সংসার-দায়িত্বে ভরপুর। এতসব দায়িত্বের মাঝে অনেক সময় জীবনের অনেক ভালো মুহূর্ত কাটাতে পারেন না তিনি।
এর থেকেই অনুমান করতে পারা যায় যে এই পিত্তৃন্ত্রিক আদর্শ একজন পুরুষের জন্য যেমন মারাত্মক তেমনি একজন নারীর জন্যও মারাত্মক।
এর মধ্যে আরও ক্ষতিকর বিষয় হল, অনেক সময় পুরুষ মানুষ এর ক্ষতিকর দিকটা জানতেই পারেন না সে শুধু নিজেকে নিয়েই হতাশ হতে থাকে। এর ভিত্তিতে পিতৃতন্ত্র পুরুষের জন্যও বিপজ্জনক বললে ভুল হবে না।
মিলি মুখার্জী
Like
Comment
ব্যাকগ্রাউন্ড কালার চোখ খারাপ করে দিচ্ছে। তাই পড়তে অসুবিধা হচ্ছে।
দেখছি চেঞ্জ করা যায় কিনা
কবে আবার হাতধরাধরি করে চলবো..
কবে আবার একে অপরের কথা বলবো!
কবে আবার পড়ে গেলে বাড়িয়ে দেবো হাত,
কবে আবার বিপদে মোরা লড়বো একসাথ..!?
সেদিন হয়ত বেশি দূর নয়