মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি, এমন একটি নাম যার সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। মুথুলক্ষ্মী এমন সময়ে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন যখন ভারতীয় সমাজ রক্ষণশীল ঐতিহ্যে নিমজ্জিত ছিল।
এটা সেই যুগের (ঊনবিংশ শতাব্দী) একটা বিবরণ যখন কনের বয়স হোত মাত্র পাঁচ বছর। যাকে আজীবন বৈধব্য ভোগ করতে হোত। ডাঃ (মেডিকেল) মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি, সেই যুগের একজন অদম্য ভারতীয় নির্মাতা। ৩০ জুলাই ২০২২ তার বয়স ১৮৩ বছরের জন্মদিন। তার কথা মনে পড়ল কেন?
দক্ষিণের ব্যক্তিত্বরা বিন্ধ্যের উত্তরে কম পরিচিত। ডঃ লক্ষ্মীর ভক্তদের মধ্যে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের প্রথম রাজ্যপাল শ্রীমতী সরোজিনী নাইডু এবং জাতীয় কংগ্রেসের ৩৩ তম সভাপতি অ্যানি বেসান্ত। জওহরলাল নেহেরু ১৯৫৬ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ (তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার) দেন।
তাঁর সমালোচকদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন বিপ্রবর্ণের চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, যিনি কখনও মহিলাদের প্রথা থেকে মুক্তির বড় সমর্থক ছিলেন না।
ডাঃ লক্ষ্মী রেড্ডি ছিলেন একজন দেবদাসীর কন্যা। তাঁর মা চন্দ্রমলের শৈশবেই মন্দিরের মূর্তির সাথে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। লক্ষ্মীর বাবা নারায়ণস্বামী আইয়ার দেবদাসী চন্দ্রম্মালকে তাঁর স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও। লক্ষ্মী নিজেও তেলুগুভাষী ডঃ সুন্দর রেড্ডির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, সামাজিক অনুমোদন ছাড়াই।
পুদুকোত্তাই (আজ তামিলনাড়ু) রাজ্যের (শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য) মহারাজা কলেজে লক্ষ্মীর ভর্তি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। তিনিই প্রথম ছাত্রি যিনি ইতিহাস পড়তে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত, মহারাজা পুদুকোত্তর মার্তন্ড ভৈরব টন্ডমের নির্দেশে, লক্ষ্মী কলেজে ভর্তি হন। তখন তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী। পরবর্তী জীবনে ডাঃ লক্ষ্মী অনেক কিছুতেই “প্রথম” পদ পেয়েছেন।
তিনি ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার (সার্জন, 1967) ছিলেন। 1926 সালে প্রথম বিধায়িকা (এছাড়াও আইন পরিষদের ডেপুটি স্পিকার)।
তখন মাদ্রাজ রাজ্যে কর্ণাটক, অন্ধ্র, কেরালা এবং তামিলনাড়ু অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি সমগ্র ভারতের বৃহত্তম পৌর কর্পোরেশনের (মাদ্রাজ) প্রথম মহিলা কাউন্সিলর ছিলেন। তার নিরন্তর সংগ্রামের ফলে “ভেজা দুধের প্রথা” শেষ হয়। এই প্রথার অধীনে, উচ্চবর্ণের মহিলারা তাদের বুককে সুঠাম ও সুন্দর রাখতে দলিত দাসীদের দিয়ে নবজাতককে স্তন্যপান করাতেন।
লক্ষ্মী ভারতে ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং অন্যান্য চিকিত্সার অগ্রগামী ছিলেন। তিনি একজন প্রখ্যাত ক্যান্সার সার্জন ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় আদিয়ারে (মাদ্রাজ) দেশের প্রথম ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপিত হয়।
আইনসভার ভূমিকায়, নারী-সংস্কার আইনের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল সীমাহীন। তিনি দেশে প্রচলিত বহুবিবাহ প্রথাকে দক্ষিণ ভারতে অবৈধ ঘোষণা করেন। দেশে প্রথম মুসলিম মেয়েদের জন্য হোস্টেল তৈরি করেছেন লক্ষ্মী।
তিনি ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় নারীদের উন্নতির খ্যাতি ছড়িয়ে দেন। তিনি নারীদের পরিবারের সম্পত্তিতে অধিকার ও শিক্ষার বাধ্যতামূলক অধিকার পাইয়ে দিয়েছিলেন।
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি সামনের সারিতে ছিলেন।
এমন এক বীরাঙ্গনাকে স্যালুট।
মিলি মুখার্জী