Skip to content

Manusher Kotha

We work for people

Menu
  • Sample Page
Menu

আশাপূর্ণা দেবী, সাহসী ও বিপ্লবী লেখার শক্তিশালী স্বাক্ষর

Posted on April 20, 2023April 20, 2023 by Manusherkotha2022

মিলি মুখার্জী

মর্যাদাপূর্ণ জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত আশাপূর্ণা দেবী, বাংলা সাহিত্যের সেইসব মুষ্টিমেয় লেখকদের মধ্যে একজন যাঁর কলম প্রতি মুহূর্তে সমাজকে ঘিরে আবর্তিত হত। তিনি বিশ্বাস করতেন যে একজন নারীর জীবন প্রতিবন্ধকতা ও বঞ্চনার মধ্যে অতিবাহিত হয়, যাকে আমাদের সমাজ ‘তপস্যা’ বলে গর্ব অনুভব করে। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর লেখা অত্যন্ত মর্মস্পর্শীভাবে নারীর মনের স্তরে চাপা থাকা অনুভূতিগুলোকে কাগজে প্রতিফলিত করে।
বিখ্যাত বাঙালি কবি ও ঔপন্যাসিক আশাপূর্ণা দেবী ১৯০৯ সালের ৮ই জানুয়ারি ঔপনিবেশিক বাংলা রাজ্যের উত্তর কলকাতার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হরিনাথ গুপ্ত এবং মায়ের নাম সরোলা সুন্দরী। তাঁর বাবা একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী ছিলেন। তাঁর মা বাংলা সাহিত্যের খুব অনুরাগী ছিলেন। আশাপূর্ণা দেবীর শৈশব কেটেছে প্রথাগত গোঁড়া চর্চার কট্টর সমর্থকদের ছায়ায়। তাঁর ঠাকুমা বিশেষ করে পুরানো ধ্যান-ধারণা ও পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন, তিনি বাড়ির মেয়েদের লেখাপড়া শেখার ঘোর বিরোধী ছিলেন। এ কারণে আশাপূর্ণা দেবী লেখা-পড়ার সুযোগ পাননি, কিন্তু তিনি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার, ভালো কিছু করার এবং লেখাপড়া করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জীবনের সব চ্যালেঞ্জ কে মোকাবেলা করে এগিয়ে গেছেন তিনি। শৈশবে যখনই তার ভাইয়েরা লেখাপড়া করতেন, তিনি তাদের সাথে গোপনে অনুশীলন করতেন এবং এইভাবে তিনি কিছুটা পড়তে এবং লিখতে শিখে যান।
শুরু থেকেই বই পড়ার খুব শখ ছিল তাঁর। বইয়ের প্রতি তার খুবই অনুরাগ ছিল, কিন্তু তাঁর বাড়ির মেয়েদের ঘরের বাইরে লেখাপড়া করার কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই আশাপূর্ণা দেবী ঘরের ভেতরের বই-পত্রিকা থেকে বাইরের জগতের জ্ঞান সংগ্রহ করতে শুরু করেন। তিনি এমন একটি সময়ে বড় হয়েছিলেন যা ছিল সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বিশৃঙ্খলা এবং গণজাগরণের সময়।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি একটি কবিতা লেখেন যা সেই সময়ে ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির সম্পাদক রাজকুমার চক্রবর্তী তাঁর কবিতা এতটাই পছন্দ করেছিলেন যে তিনি আশাপূর্ণা দেবীকে আরও কবিতা ও গল্প লেখার আহ্বান জানান। এখান থেকেই আশাপূর্ণা দেবীর সাহিত্য যাত্রা শুরু হয়।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে কালিদাস গুপ্তের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু স্বামী তাঁর পরিবারের সদস্যদের মতো তাঁর পড়ালেখার বিরোধিতা না করে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।
প্রথমদিকে তিনি শুধুমাত্র শিশুদের জন্যই লেখালিখি করেছেন। ১৯৩৬ সালে, ২৭ বছর বয়সে, তিনি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রথম ছোট গল্প লিখেছিলেন- ” পত্নী ও প্রেয়সী” যা আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
এরপর বড়দের জন্য তাঁর প্রথম উপন্যাস “প্রেম ও প্রয়োজন” প্রকাশিত হয় যা ১৯৪৪ সালে কমলা পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়।
তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় বই সিরিজ, তিনটি ভাগে বিভক্ত – প্রথম প্রতিশ্রুতি, স্বর্ণলতা এবং বকুল কথা, নারীর চিরন্তন সংগ্রামের গল্প।
এছাড়াও, তার প্রথম ছোটগল্প সংকলন ‘জল আর আগুন ‘ প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। এ ছাড়া তিনি ত্রিশটিরও বেশি উপন্যাস, অনেক কবিতা ও গল্প লিখেছেন যা এখনো প্রাসঙ্গিকতার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধরে রেখেছে। আশাপূর্ণা দেবীর গল্পগুলি পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরোধিতা করে একটি নতুন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার তাগিদ দেয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভুবন মোহিনী’ স্বর্ণপদক দ্বারা অলংকৃত আশাপূর্ণা দেবী ১৯৭৬ সালে পদ্মশ্রীতে ভূষিত হয়েছিলেন।
১৯৭৭ সালে সাহিত্য জগতে নিজের জায়গা করে নেওয়া উপন্যাস ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’কেও রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার এবং ভারতীয় জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।
আশাপূর্ণা দেবী ১৯৯৫ সালে ৮৬ বছর বয়সে এই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছিলেন, কিন্তু তার লেখা প্রতিটি শব্দ এখনও তার সাহসী এবং বিপ্লবী লেখার শক্তিশালী স্বাক্ষর। তাঁর কবিতা, গল্প ও উপন্যাসে ভারতীয় সমাজের নারীদের বেদনা, হতাশা ও মানসিক দ্বন্দ্ব অত্যন্ত মর্মস্পর্শীভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সাহিত্য মূলত নারীকেন্দ্রিক। আশাপূর্ণা দেবীর সাহিত্য, সমাজে বিরাজমান নারী সমস্যার সম্প্রসারণ মাত্র। তাঁর উপন্যাসে আজকের পারিবারিক জীবনের সমস্যা প্রতিফলিত হয়েছে।
নারী মনের বেদনার সূক্ষ্ম চিহ্ন লেখকের সূক্ষ্ম দৃষ্টি ও চিন্তার গভীরতার পরিচায়ক। তার আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে নারীর অস্তিত্বের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করতে সক্ষম। আশাপূর্ণা দেবী একজন বাস্তববাদী লেখিকা, বিনা দ্বিধায় সত্য বলাই যার একমাত্র লক্ষ্য।
নারীদের নিয়ে করা বক্তব্যকে ঠাট্টা করে লেখিকা বলেন, “আজ নারীরা ঘরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রই সামলাচ্ছেন। প্রয়োজনে তারা সিনেমা-থিয়েটার করতে পারেন এবং প্রয়োজনে ঘরের কাজও করতে পারেন। তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত তিক্ত মিথ্যা ও মিষ্টি সত্যগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে তা কোনো গল্পের অংশ বলে মনে হয় না। তাঁর গল্পগুলো সমাজের রক্ষণশীল ধারণার উপর অনেক প্রশ্ন চিহ্ন রেখেছে, যা কেবল আমাদের মন নয়, আমাদের সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর হৃদয়কে নাড়া দেয়। সামাজিক চরিত্রগুলোর আত্ম-সংগ্রামের জীবন্ত চিত্রায়নই তাঁর কথাসাহিত্যের একমাত্র লক্ষ্য।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় তার স্থান আজও অন্যতম ।

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Posts

  • প্রযুক্তিতে নারীদের অবদান ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে
  • আশাপূর্ণা দেবী, সাহসী ও বিপ্লবী লেখার শক্তিশালী স্বাক্ষর
  • মে দিবস শ্রমিকদের সেই আত্মত্যাগের নাম ,যারা বদলে দিয়েছিল পৃথিবীর মানচিত্র
  • মে দিবস শ্রমিকদের সেই আত্মত্যাগের নাম ,যারা বদলে দিয়েছিল পৃথিবীর মানচিত্র
  • এক বিপ্লবী লেখিকার কথা

Recent Comments

  1. Rabi Roy on সমাজতন্ত্র ও নারী – আনা লুইস স্ট্রং
  2. Rabi Roy on জু লিঝি: একজন চীনা শ্রমিক কবি যিনি পুঁজিবাদী মুনাফার শিকার হয়েছিলেন-
  3. Manusherkotha2022 on পিতৃতন্ত্রে পুরুষ মানুষ হত
  4. Manusherkotha2022 on পিতৃতন্ত্রে পুরুষ মানুষ হত
  5. Anup Chakrabarty on রবিশ কুমারদের সরিয়ে দিয়ে কি মানুষের কন্ঠরোধ করা যায় ?

Archives

  • April 2023
  • March 2023
  • February 2023
  • January 2023
  • December 2022
  • October 2022
  • September 2022
  • July 2022
  • May 2022
  • February 2022

Categories

  • golpo
  • Photography
  • Uncategorized
  • কবিতা
  • প্রবন্ধ
© 2023 Manusher Kotha | Powered by Minimalist Blog WordPress Theme