দক্ষিন কোরিয়ার শীর্ষ আদালত সম্প্রতি সংগঠিত পতিতাবৃত্তি সম্পর্কিত একটি নিম্ন আদালতের রায়কে অনুমোদন দিয়েছে৷ নিম্ন আদালত রায় দিয়েছে যে দক্ষিন কোরিয়ান সরকার ১৯৫০ থেকে ৭০ এর দশক পর্যন্ত সংগঠিত পতিতাবৃত্তি সংগঠিত করার জন্য দোষী। সিদ্ধান্তের অধীনে, ৯৫ জন মহিলা যারা ২০১৪ সালে মামলা দায়ের করেছিলেন এবং অতীতে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত ছিলেন, তাদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রতি মহিলাকে ৫০ লক্ষ দক্ষিন কোরিয়ান ইয়েন (প্রায় ৩ লক্ষ টাকা) দেওয়ার জন্য সরকারকে বলা হয়েছে। ১৯৫৩ সালে কোরিয়ান যুদ্ধের শেষে, প্রায় ২০০০,০০০ আমেরিকান সৈন্য দক্ষিন কোরিয়াতে থেকে গিয়েছিল। এই শিবিরগুলিতে আমেরিকান সৈন্যদের সেবা করার জন্য সরকার কর্তৃক ২০,০০০ এর মতো তরুণী ও নারীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এইসব মেয়ে এবং মহিলারা বেশিরভাগই ছিল যারা যুদ্ধের সময় তাদের পরিবার বা জীবিকা চালানো ব্যাক্তিদের হারিয়েছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পতিতাবৃত্তি হয়ে ওঠে আয়ের প্রধান উৎস। ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে, ক্যাম্প টাউনে পতিতাবৃত্তি দক্ষিন কোরিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ২৫ শতাংশের সমান ছিল জাপানের মতো, দক্ষিণ কোরিয়ার ডানপন্থী একনায়কত্বও ক্যাম্পটাউনে একটি সংগঠিত পতিতা বাণিজ্য শুরু করে। এই পেশায় নিয়োজিত নারীদের বলা হতো কমফোর্ট ওমেন। ১৯৬২ সালে, পার্ক চুং হির একনায়কত্বের অধীনে, ১০৪টি জেলায় পতিতাবৃত্তির উপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলিতে ভারী কর ছাড় দিয়ে এই ব্যবসাকে উত্সাহিত করা হয়েছিল। সরকার কর্তৃক এই পেশায় আনা নারীদের যৌনবাহিত রোগের বিস্তার এড়াতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার একটি নির্যাতনমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। এই স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলি প্রায়শই মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ছিল। আমেরিকান সৈন্যরা যে কোনও কমফোর্ট ওমেনের প্রতি যৌন রোগের সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেএবং তখন ওই মহিলাকে অন্য জায়গায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হতো। এখানে তাকে ওষুধের বিপজ্জনক ডোজ দেওয়া হোত। আমেরিকান সৈন্যরা কোয়ারেন্টাইন জায়গাটিকে মাঙ্কি হাউস বলত কারণ এখানে রাখা মহিলারা প্রচুর পরিমাণে ওষুধের যন্ত্রনার কারণে বাইরে বের হওয়ার জন্য চিৎকার করতেন। প্রায়শই কারাগারের মতো পরিস্থিতিতে, মহিলারা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগের জন্য আহত বা নিহত হতেন। আমেরিকান ডাক্তাররা মহিলাদের স্বাস্থ্যের চেয়ে যৌন সংক্রামিত রোগ নির্মূলে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন। আমেরিকান সৈন্যরা প্রায়ই এই কমফোর্ট উইমেনদের ধর্ষণ করত এবং তাদের মাঙ্কি হাউসে রেখে দিত। যেখানে চিকিৎসার পর জীবিত বেরিয়ে আসার পর তাদের প্লাস্টিকের একটি ব্যাজ পরতে হোত যাতে বোঝা যেত যে এদের পরীক্ষা হয়েছে। এভাবে হাজার হাজার মেয়ে ও নারীর জীবন নরকে পরিণত করতে আমেরিকা-কোরিয়ান শাসকগোষ্ঠী কোন কসুর রাখে নি। আমেরিকার দ্বারা সারা বিশ্বে করা হিংসার হামলার ত্রাস সেখানকার মেয়েদের এভাবে সহ্য করতে হোত। মিলি মুখার্জী