‘বাংলার দুর্ভিক্ষ’ ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুরতম গণহত্যা, যা নিছক দুর্ভিক্ষ হিসেবে ইতিহাস ভুলে গেছে তা সরাসরি উইনস্টন চার্চিল ও ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা পরিচালিত গণহত্যা।
হিটলার লক্ষ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করেছিল। তারা মার্কেটিংএর ভিত্তিতে আজও বিশ্বের সহানুভূতি কুড়াই, কিন্তু ভারতীয়দের উপর যে অত্যাচার চলেছে তার কোন আলোচনা নেই।
‘বাংলায় ১৯৪২ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ’ সম্পর্কে খুব কম লোকই জানবে, যেখানে 40 লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল অর্থাৎ দেশভাগের সময় দাঙ্গার চেয়ে চারগুণ বেশি, কিন্তু এই ঘটনার কোথাও কোন উল্লেখ নেই।
দুর্ভিক্ষের সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চরম পর্যায়ে ছিল। জার্মান সেনাবাহিনী পুরো ইউরোপকে পদদলিত করছিল। এই সময়ে অ্যাডলফ হিটলার এবং তার সহযোগী নাৎসিরা ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ, এই গণহত্যাকে পুরো বিশ্ব এখনও হলোকাস্ট হিসাবে স্মরণ করে।
৬০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করতে হিটলারের ১২ বছর লেগেছিল, কিন্তু ব্রিটিশরা মাত্র এক বছরের একটু বেশি সময়ে ৪০ লক্ষ ভারতীয়কে হত্যা করেছিল, কিন্তু কোথাও এটি নিয়ে কোন আলোচনা নেই।
কিন্তু কেন ? ভারতীয়রা কী মানুষ নয়..?
নাকি আমরা আমাদের ক্ষত বাজারজাত করতে জানি না তাই!
ডাঃ গিডিয়ন পলিয়া, একজন অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী এবং সামাজিক কর্মী যিনি এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে বাংলার দুর্ভিক্ষ একটি ‘মানবসৃষ্ট সর্বনাশ’ কারণ তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের নীতিগুলি এর জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ছিল।
১৯৪২ সালে, বাংলায় শস্য উৎপাদনও খুব ভাল ছিল, কিন্তু ব্রিটিশরা বাণিজ্যিক লাভের জন্য ভারত থেকে ব্রিটেনে প্রচুর পরিমাণে শস্য পাঠাতে শুরু করে। এই কারণে আজকের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, বিহার এবং বাংলাদেশের যে অঞ্চলগুলো পরে সেখানে খাদ্যের তীব্র ঘাটতি ছিল। আরেকজন লেখিকা মধুশ্রী মুখোপাধ্যায়, দুর্ভিক্ষ থেকে বেঁচে যাওয়া কিছু লোককে খুঁজে বের করতে পেরেছিলেন।
চার্চিল’স সিক্রেট ওয়ার শিরোনামের বইতে তিনি লিখেছেন, ‘বাবা-মা তাদের ক্ষুধার্ত সন্তানদের নদী ও কুয়োতে ফেলে দেন। অনেকে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ক্ষুধার্ত মানুষ ভাতের ফ্যানের জন্য ভিক্ষা করেছে, শিশুরা পাতা ও ঘাস খেয়েছে। মানুষ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে তাদের প্রিয়জনের শেষকৃত্য করার শক্তিও ছিল না।
এই দুর্ভিক্ষের প্রত্যক্ষদর্শী এক প্রবীণ, মুখার্জীকে বলেছিলেন, ‘বাংলার গ্রামগুলি ছিল মৃতদেহের স্তূপ যা কুকুর ও শেয়ালের পাল টানা হ্যাঁচড়া করতো। যারা চাকরির সন্ধানে কলকাতায় এসেছিলেন বা যে মহিলারা তাদের পরিবারকে পালন করার জন্য পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য হয়েছিল, তারাই এই দুর্ভিক্ষ থেকে বেঁচেছিল।
মধুশ্রী মুখার্জি লিখেছেন, গ্রামের মেয়েরা পতিতা হয়ে গিয়েছিল আর তাদের বাবা দালাল।
এই গণহত্যার জন্য দায়ী উইনস্টন চার্চিলের ভারতের প্রতি বৈরিতা নতুন কিছু ছিল না।
ওয়ার ক্যাবিনেটের এক বৈঠকে তিনি দুর্ভিক্ষের জন্য ভারতীয়দের দায়ী করে বলেছিলেন, ‘তারা খরগোশের মতো বাচ্চা দেয়’। এই কথা থেকেই ভারতীয়দের প্রতি তার মনোভাব বোঝা যায়, তিনি বলেছিলেন ‘আমি ভারতীয়দের ঘৃণা করি। তারা পশুবাদী ধর্মের মানুষ।
আরেকটি অনুষ্ঠানে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে জার্মানদের পরে ভারতীয়রা বিশ্বের সবচেয়ে নৃশংস মানুষ।
মিলি মুখার্জী