Skip to content

Manusher Kotha

We work for people

Menu
  • Sample Page
Menu

ভোঁতা পাথর থেকে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, মস্তিষ্ক দখলের যাত্রাপথে হাতিয়ারের ভূমিকা

Posted on January 19, 2023January 19, 2023 by Manusherkotha2022

কালাগ্নি রুদ্র

ভূমিকায়

মানুষ যেদিন নিজের হাতে আগুন জ্বালাতে শিখল , যেদিন চার-পা ছেড়ে দুই হাঁটুর উপরে ভর করে দাঁড়াতে শিখল , সমাজ গড়ার প্রয়োজনে যেদিন মানুষের ভোকাল কড বিকশিত হয়ে কথা বলতে শিখল , যেদিন দুই হাতে পাথর ছুঁড়ে শিকার করত দলবদ্ধভাবে, সেইসব দিন থেকেই মানুষের বুদ্ধির বিকাশ ঘটতে শুরু হল দ্রুতহারে । মানুষের সাথে অন্যান্য প্রাণীর তফাত হয়ে গেল বুদ্ধিতে । মানুষ তার অর্জিত বুদ্ধি দিয়ে প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে সৃজনধর্মী আবিষ্কার করতে শিখল । আজ ভোঁতা পাথর হাত থেকে ফেলে দিয়ে মানুষ ন্যানো টেকনোলজির জন্ম দিয়েছে ।  কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ব্যবস্থা , কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা , ইন্টারনেট অফ থিংস , রোবট বানানোর কাজে এগিয়ে চলেছে মানুষ , ভিন গ্রহে বসতি স্থাপনে মাথা খাটাচ্ছে মানবজাতি । মূল সমস্যা কেবল  নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির নয় । মৌলিক সমস্যা হলো এমন চাকরি সৃষ্টি করা যেখানে মানুষ মেশিন  অ্যালগরিদমের অধীনস্থ না হয়  । ফলস্বরূপ ২০৫০ সালের মধ্যে একটি নতুন শ্রেণীর মানুষ জন্ম নেবে যখন মানুষের শরীর ও মস্তিষ্কের দখল নিয়ে নেবে যন্ত্র । এই ধরনের মানুষ যারা শুধু বেকারই হবে না বরং কোনো কর্মসংস্থানের যোগ্যও হবে না । .তখন হয়ত একবিংশ শতাব্দীর পুঁজিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা রাজনৈতিকভাবে  সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তুলবে  এই বিশ্বে  কি আসলেই মানুষের প্রয়োজন? অথবা আমাদের কি এত মানুষের প্রয়োজন ?

৫ জি প্রযুক্তি কি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ?

আমরা জানি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের দেশে চালু হয়ে গেল ৫ জি প্রযুক্তি । আমরা ভাবি ৩ জি ,৪ জি প্রযুক্তি তো ব্যবহার করেছি । ৫ জি প্রযুক্তি ব্যবহার করব এ আবার এমন কি ! এক ধাপ এগিয়ে গেলাম মাত্র । তা এই ধাপটুকু কতটুকু পরিবর্তন আনছে মানুব সমাজে ? আপনি নেট চালু করেছেন , কিন্তু বাফারিংয়ের চক্করে পড়ে আপনার মাথা খারাপ হয়ে যেত এতকাল । এসে গেল ৫ জি প্রযুক্তির যুগ । ধরুন কোন একটা সিনেমা যেটা ডাউনলোড করতে ৩ জি প্রযুক্তিতে লাগত ২৬ ঘন্টা ,  এর পর ৫ জি প্রযুক্তিতে সেটা সময় নেবে মাত্র ৩.৬ সেকেন্ড । ভাবছেন এত দ্রুততার কী প্রয়োজন !  ভেবে দেখেছেন কি,  চিকিৎসার জগতে ৫ জি প্রযুক্তির প্রয়োগে রোবোটিক সার্জারিতে কী সাফল্য আসতে পারে ?  আপনি কান্দি হাসপাতালে শুয়ে আছেন ,  রিমোট অপারেশানের মাধ্যমে চেন্নাই থেকে ডাক্তার অতি কম সময়ে আপনার অপারেশানের কাজ সমাধা করে দিতে পারবে । সারা বিশ্বে যত চারচাকা চলে, “এআই” ( Artificial Intelligence) নিয়ন্ত্রিত হয়ে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ড্রাইভার খালাসি ছাড়াই গাড়ি চালানো যাবে দুর্ঘটনা ছাড়াই । শুধু এটাই ? তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি লেগে যায় , ৫ জি নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে ড্রোন, সোয়াম ড্রোন , চালকবিহীন এয়ারক্রাফট , স্টার ওয়ার চালানো সহজ হয়ে যাবে । ৫ জি টাওয়ার এবং উপগ্রহের মাধ্যমে পাঠানো সফটওয়ার ভিত্তিক ক্লাউড নেটওয়ার্ক যাতে কোন তার লাগবে না । এলন মাস্কের “স্টার লিংক” ১২ হাজার কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ।  মার্কেটিং থেকে কম্যুউনিকেশান পর্যন্ত শিল্পের একটা বড় অংশ ইন্টারনেটের উপরে নির্ভরশীল আজ.। বিশ্বের সমগ্র বাজারের অধিকাংশটাই আজ এই নেটওয়ার্ক দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয় ।  ইন্টারনেট অনেক কারণেই ব্যাহত হয় এবং স্বল্প সময়ের জন্য এটি বন্ধ থাকলে অর্থনীতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বিমান ভ্রমণ, ব্যবসা, সামাজিক জীবন ইত্যাদির উপর গভীর প্রভাব ফেলে । আজ বিশ্ব অর্থনীতির একটি সুবিশাল  অংশ ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। আমরা কম্পিউটারের বিকাশক্রম থেকে প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের একটি সম্পূর্ণ আভাস পাই, যার প্রাথমিক রূপ ছিল শুধুমাত্র ক্যালকুলেটর বা ট্যাবুলেটর, যা ভ্যাকুয়াম টিউব, ট্রানজিস্টর এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে এখন অত্যাধুনিক সুপার কম্পিউটার এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটার এসে পৌঁছেছে।  এই সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করতে গেলে ৫ জি ,৬জি প্রযুক্তি লাগবেই । মানুষের মস্তিষ্ক এবং কম্পিউটারের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তুলনায় আমাদের মস্তিষ্ক খুবই ধীর । যেখানে আজকের কম্পিউটার এক সেকেন্ডে ট্রিলিয়ন বাইনারি প্রসেস করতে পারে, আমাদের মস্তিষ্ক এক সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১০০০ বাইনারি অপারেশন করতে পারে। কম্পিউটারের মেমোরি সঞ্চিত থাকে , মানুষের স্মৃতি মুছে যায় ধীরে ধীরে । তাই ডাটা বা তথ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারাটিকে দ্রুতায়ন করে গোটা মানব সমাজকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে এবং পরিচালনা করতে এই ৫ জি প্রযুক্তির আবশ্যিকতা অনিবার্য হয়ে উঠেছে ।

ন্যানো টেকনোলজি এক যুগান্তকারী আবিষ্কার

 পারমাণবিক ও আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরী করার জন্য ধাতব বস্তুকে সূক্ষভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞানকে বলা হয় ন্যানো টেকনোলজি । ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় ১ ন্যানোমিটার । এই আণবিক পরিমাণের ধাতব বস্তু দিয়ে তৈরী হবে আধুনিক নানান যন্ত্রপাতি, জ্বালানি, ওষুধ , কমিউটার চিপ ইত্যাদি । ন্যানো ট্রানজিসটর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে এসবের মাধ্যমে প্রযুক্তির সূক্ষ প্রয়োগ ইলেকট্রনিক্স জগতে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন । বিভিন্ন পাখির ডাক, ফুল-ফল-গাছ এসব আজ বিভিন্ন এ্যাপ, সফটওয়ারের মাধ্যমে আমাদেরকে অনায়াসে সকল অজানা বস্তুকে চিনিয়ে দিচ্ছে  । আজকের দিনে গুগুল ম্যাপ পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে অনায়াসেই আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে । এই ইন্টারনেট অফ থিংস, এ আই –এর সাথে যুক্ত হয়ে রাষ্ট্র প্রশাসন আপনার রুচি, পছন্দ, খবরাখবর, গতিবিধি সকল কিছুই নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রেখেছে ।  আপনার চলার , বলার ,কিছু করার স্বাধীনতার উপর নজরদারি রাখছে শাসক । ন্যানো টেকনোলজি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা মোবাইলের উপর যে গ্লাস প্রটেক্টর লাগাই তাও ন্যানো টেকনোলোজির সাহায্যে তৈরি। আমাদের কম্পিউটারের মেমোরি চিপ এবং প্রসেসর ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কাজের গতি আগের থেকে অনেক বেশি দ্রুত হচ্ছে। আমরা আমাদের স্মার্টফোনকে আরো বেশি স্মার্ট বানাচ্ছি। শুধুমাত্র আমাদের হাঁটা থেকে যে এনার্জিটা তৈরি হবে সেটাকে ন্যানো জেনারেটরের সাহায্যে ব্যবহার করে আমরা ফোনকে চার্জও করতে পারি। আমরা মেডিসিনকে নির্দিষ্টভাবে সেই জায়গাতে ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে পৌঁছে দিতে পারি শরীরের যে জায়গাতে আমাদের চিকিৎসার প্রয়োজন। যেমন শরীরের ক্যান্সার কোষ শনাক্ত করতে পারবে এবং চিকিৎসা করতে পারবে। যার সাহায্যে চিকিৎসাপদ্ধতিকে আগের থেকে আরও বেশি কার্যকরী বানানো সম্ভব কারণ এখানে ঔষধের পরিমাণটাও কম লাগে এবং সাইডএফেক্ট অর্থাৎ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম হবে। কৃষিক্ষেত্রে এই টেকনোলোজি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবে। এমনকি বর্তমানে গাড়ি এবং কলকারখানা থেকে যে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন হচ্ছে তা ব্যবহারযোগ্য গ্যাসে কনভার্ট করাও সম্ভব হতে পারে এই ন্যানো টেকনোলজি দ্বারা।   

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানুষের প্রভু হয়ে পড়বে ?

মানুষের ব্রেইনের নার্ভ সিস্টেমের নিউরাল নেটওয়ার্ক কে অনুকরণ করে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্কের উৎপত্তি মানুষের ব্রেইনের অনুরূপ যান্ত্রিক ব্রেইন হচ্ছে “ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” । কম্পিউটারকে আরো স্মার্ট, মানুষের ব্রেইন যেভাবে কাজ করে, সেভাবে তৈরি করতে নিউরাল নেটওয়ার্ক সাহায্য করে।  আমাদের মস্তিষ্কের ডেটা সঞ্চয় ক্ষমতা কম্পিউটারের তুলনায় কিছুই নয়….. যেখানে কম্পিউটার বাইনারি ল্যাঙ্গুয়েজে ডেটা সঞ্চয় করে, সেখানে আমাদের মস্তিষ্ক ডেটাকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যালে বদলে সংরক্ষণ করে । বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আজকের কম্পিউটার তার কমপিউটেশেন্যাল এবিলিটির সাহায্যে মানুষের বুদ্ধিকে পরাস্ত করার ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ অর্থাৎ ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ এর সীমা স্পর্শ করেছে এবং একটি সম্ভবনা আছে যে, আগামী ৪০ বছরে এটি মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে ডেটার মহাসাগর । তথ্য বা ইনফরমেশন, বিভিন্ন কেস স্টাডি ঠেসে কম্পিউটার যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান যে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে করা যায় তার নাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা । “মেসিন লার্নিং” আর “বিগ ডেটা এ্যানালিসিস” এই দুই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্যের সাগর এ্যানালিসিস করে AI ( Artificial  Intelligence ) ।  আর এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে ফেসবুক লগারিদম দিয়ে আপনার ইচ্ছা, রুচি্‌ পছন্দ , প্রকৃতি সব বুঝে নিচ্ছে  কম্পিউটার জাতীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস । খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই আপনার ফেসবুক এক্টিভিটির সময় ফেসবুক , ভাষা ছবি নানান বিজ্ঞাপন যোগান দিচ্ছে আপনার প্রয়োজন অনুমাণ করে  । এ আর এমন কি ! আগামী দিনে সমস্ত রোগের কেস স্টাডির তথ্য  এবং তার সমাধানের উপায় ডেটার মাধ্যমে পুরে দিয়ে  ডাক্তারের পরিবর্তে আপনাকে চিকিৎসা করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক সুপার কম্পিউটার । মামলা মোকদ্দমায় আর উকিল লাগবে না । আইনের সব তথ্য , বিচারের ভার্ডিক্ট সংগ্রহ করে যন্ত্রে পুরে দিলে সেই রোবটিক যন্ত্র আপনার হয়ে আদালতে সওয়াল করবে । রাস্তায় চারচাকা চলবে ড্রাইভার ছাড়াই ।  আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং , সুন্দর পিচাই, ইলন মাস্ক, বিল গেটস, স্টিভ ওয়াজনিয়াক, ওরেন এটজোনি ইত্যাদি প্রযুক্তি ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বারংবার সতর্ক করে আসছেন ….. তারা মনে করেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোগ এবং দারিদ্র্য দূর করার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু গবেষকদের এমন এ আই-এর বিকাশের প্রচেষ্টা করতে হবে যা মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে । মানুষ যদি বুদ্ধিমত্তার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে , যদি রোবটের উপর প্রভুত্ব হারিয়ে ফেলে তাহলে আগামি দিনে বিশ্বের নিয়ন্ত্রন ওদের হাতে চলে যাবে না ,কে বলতে পারে !

ইন্টারনেট অফ থিংস মানে কি পায়ের বেড়ি ?

ইন্টারনেট কথাটা আমরা বুঝি , থিংস মানে বস্তু এটাও বুঝি । এক্ষেত্রে থিংস বলতে স্মার্ট ডিভাইসগুলোকে বুঝি যথা, ক্যামেরা , টিভি , ফ্রিজ , এসি, লাইট , অডিও সিস্টেম , ওয়াশিং মেসিন , কম্পিউটার  ইত্যাদি ইত্যাদি প্রতিদিনের ব্যবহার্য নানা বস্তু ।

            এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাবতীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোকে কানেক্ট করে স্বয়ংক্রিয় ভাবে পরিচালিত করা যায় এই পদ্ধতির নাম “ইন্টারনেট অফ থিংস” । বিশ্বের প্রতিটি “থিংস” বা বস্তু বা তার পরিবেশ মোবাইল বা কম্পিউটার সেন্সরের মাধ্যমে তড়িৎ সিগন্যালে রূপান্তর করে নিয়ে জিও-সেন্সিংয়ের মাধ্যমে ক্যাচ করে , তারপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বস্তুর প্যাটার্নগুলো পর্যবেক্ষন এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে আউটপুট দেয় প্রয়োজনীয় এবং নিঁখুত ভাবে ।  ধরুন আপনার ঘুম ভাঙলো , ইন্টারনেট আপনার অবস্থান বুঝে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিল , ঘরের এসি বা ফ্যান আপনা-আপনিভাবে সুইচ অফ করে দিল । আপনার বাড়ির রাস্থায় ধরুন কুকুর মরে পড়ে আছে , আপনার  জিও-সেন্সর এর মাধ্যমে কুকুরটাকে স্পট করলেন । ১০ মিনিটের মাথায় পৌরসভার গাড়ি এসে মরা কুকুরটা তুলে নিয়ে গেল । এরকম অজস্র উদাহরণ দিতে পারি ,তবে উদাহরণ বাড়িয়ে যাওয়া নিবন্ধটির উদ্দেশ্য নয় ।  কিন্তু ভেবে দেখবেন কি , আপনি সপরিবারে শুধু আধার আর প্যান কার্ডের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা খুইয়েছেন তাই নয় , এই “ইন্টারনেট অফ থিংস” সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত হলে আপনি রাষ্ট্রের দাসানুদাসে পরিণত হবেন । খেয়াল রাখবেন এই “ইন্টারনেট অফ থিংস” কিন্তু আগামীদিনে “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা”র দ্বারা সংযুক্ত ।

“কোয়ান্টাম সুপার কম্পিউটার” কি সমস্ত গোপনীয়তা  ভেঙে চুরমার করে দেবে ?

পদার্থ বিদ্যার জগত থেকে কম্পিউটার লগারিদম বলতে বুঝি ০ (জিরো) আর ১ ( ওয়ান) এর সুবিন্যাস । এটাই প্রচলিত কম্পিউটিং পদ্ধতির ভাষা । কোয়ান্টাম বিজ্ঞান প্রচলিত পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মে চলে না । কোয়ান্টাম বিজ্ঞানকে তাই অনেক সময় পরাবাস্তবতা বলে মনে হলে কয়েক দশক ধরে কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের সাফল্য আমাদের বিষ্মিত করেছে । এখনকার কম্পিউটার চলে “বিট”এর উপর নির্ভর করে যা জিরো আর ওয়ানের বিন্যাস । কোয়ান্টাম  নিয়মে চলে তা হচ্ছে “কিউবিট সিস্টেম” । প্রচলিত কম্পিউটারের চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ দক্ষতায় এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার রেজাল্ট দেবে । এই যে “এ্যাপল ফোন” , এই যে বিটকয়েন তথা ক্রিপ্টোকারেন্সি যা এনক্রিপ্টেড বলে দাবি করা হয় , যে ডেটা গোপনীয় এবং তাকে মুছে ফেলা বা হ্যাক করা যায় না তা নিমেষেই ভেঙে ফেলবে সুপার কোয়ান্টাম কম্পিউটার । আজকের যুগ বিগ ডেটার যুগ । তাই এই যুগে সারা বিশ্বের সমস্ত তথ্য ভান্ডার মজুত করা এবং সুনিপুণভাবে বিশ্লেষণ করতে চূড়ান্ত দক্ষ কোয়ান্টাম পদ্ধতিতে আবিষ্কৃত কম্পিউটার ।  বিদ্যুৎ-এর খরচ প্রায় একপ্রকার বোঝাই যাবে না “কোয়ান্টাম ট্যানেলিং” পদ্ধতির ব্যবহারের জন্য । কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয়ে গেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যে দুটি ভিত্তি “মেসিন লার্নিং” তা দক্ষতার সাহায্যে ডেটাবেস তৈরীতে দুরন্ত কাজে আসবে । আর “ বিগ ডেটা প্রসেসিং” এর কাজ অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সমাধা হবে ।

আপনার ঘরে থাকা টিভির বিবর্তন কি খেয়াল করেছেন ?

১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী মে ও স্মিথ ইলেকট্রনিক সিগনালের মাধ্যমে ছবি পাঠানোর ভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এরপর বৈজ্ঞানিকমহলে টিভির আধুনিকীকরণের চেষ্টা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছিল। ১৯২৬ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড যুগান্তকারী আবিষ্কার করে ফেলেন। তার আবিষ্কৃত টেলিভিশনের মাধ্যমে সাদা-কালো ছবি দূরে বৈদ্যুতিক সম্প্রচারের মাধ্যমে পাঠানো সম্ভবপর হয়। বিশ্বে বাণিজ্যিক ভাবে টেলিভিশনের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৪০ সাল থেকে। অতঃপর ১৯৪৫ সালে যন্ত্রটি পূর্ণতা লাভ করে। বহুকাল ধরেই আমার আপনার বাড়িতে সিআরটি টিভির চল ছিল বেশি।……..১৯৩০ থেকে প্রায় ২০০০ সাল পর্যন্ত চুটিয়ে ব্যবসা করেছিল সিআরটি টিভি। এরপর বাজার এলসিডির দখলে চলে যায়।………..সেই টিভির তুলনায় এলসিডি বা লিক্যুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে ছিল অনেক বেশি আকর্ষণীয়। দেওয়ালে মাউন্ট করার সুবিধার পাশাপাশি ছিল দুর্দান্ত লুক এবং বিদ্যুতের কম খরচ। প্রদর্শিত ছবির মান উন্নত এবং ন্যাচারাল হওয়ায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এই টিভি।…………..এরপর আবির্ভাব এল ই ডি টিভির…..স্ক্রিনে আলোর উৎসের জন্য এটিতে সিসিএফএল লাইটের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে এলইডি লাইট প্যানেল। যার ফলে সামনে বসে থাকা ব্যক্তি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ছবি উপভোগ করতে পারেন।…………সবাই চায় স্মার্ট হতে। ………. ২০১৭ সালের পর অধিকাংশ  বাড়িতেই স্মার্ট টিভি ।  সারাক্ষণ বাড়িতে  ইউটিউব, গুগল খুলে মোবাইল , কম্পিউটার , ল্যাপটপ পেয়ে যায় টিভিতে । গ্রহণযোগ্যতায় বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছে স্মার্ট টিভি। এলইডিতে যে সকল ফিচার রয়েছে তার পাশাপাশি ওয়াইফাইয়ের ফিচার যোগ করা হয়েছে স্মার্ট টিভিতে।………ফোরকে বা এহডি টিভি , এই টিভির প্যানেলে আড়াআড়ি ভাবে রয়েছে ৩৮২০টি পিক্সেল এবং উপরনীচে রয়েছে ২১৬০ পিক্সেল। প্রায় চার হাজার পিক্সেল থাকার জন্যই এই টিভির নাম ফোরকে। ……..এরপর আসবে ফোটোনিক্স কম্পিউটার টিভি  আর আসবে কোয়ান্টাম টিভি । বাণিজ্যমহল তাই কোমর বেঁধে তাই নেমে পড়েছে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিকে সাথে নিয়ে ।

আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে , ডিজিটাল মুদ্রা , ক্রিপ্টোকারেন্সি কি মাল্টি-পোলার বিশ্বের জন্ম দেবে ?

বিশ্বে প্রায় দুশোটি দেশে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে জাঈয় স্তরে মুদ্রা লেন-দেনের ব্যবস্থা চালু আছে শত শত বছর ধরেই । কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে এটিএম কার্ড বা বিভিন্ন এ্যাপের মাধ্যমে যে কেনাবেচা ব্যবস্থা হয় তাকে বলে প্লাস্টিক মানি ।

রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রনের বাইরে বিশ্বে প্যারালাল কেনা-বেচার অর্থনীতি পরিচালিত হয় যা রাষ্ট্রের নজরদারির বাইরে । সফটওয়ার ও ইন্টারনেট যুগের ফলশ্রুতিতে “ ব্লক-চেইন-টেকনোলজি” পদ্ধতিতে  এনক্রিপ্টেড মুদ্রাব্যস্থা চালু হয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে যা বিটকয়েন, ব্ল্যাক্কয়েন, ইথেরিয়াম ইত্যাদি নানা নামে চলছে । এগুলো এনক্রিপ্টেড এমন ভাবে থাকে যার ফলে কোন তথ্যই মুছে ফেলা যায় না । প্লাস্টিক মানি যেমন হ্যাক করা যায় , ইদানিংকালে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি নাকি হ্যাক করা যাচ্ছে । কিন্তু এই ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করতে গিয়ে যে বিদ্যুৎ খরচ হবে সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ কোন দেশেই নেই । তাছাড়া এই পরিমাণে বৈদ্যুতিক দূষণ ঘটালে বিশ্বে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাবে ।  সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য আমেরিকা “সুইফট” পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করত । সাম্প্রতিককালে রাশিয়া চীনকে জব্দ করার জন্যে “সুইফট” সিস্টেম থেকে বহিষ্কার করা হল । চীন আন্তর্জাতিক লেনদেন করার জন্যে চালু করল “সিআইপিএস” নামক বিকল্প পেমেন্ট গেটওয়ে এবং চীনা ডিজিটাল মুদ্রা ইউয়ান । রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের জন্যে রাশিয়াকে যখন “সুইফট” থেকে বহিষ্কার করা হল , তখন রাশিয়া আন্তর্জাতিক ভাবে রুবলকে “এসপিএফএস” নামক একটি পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করল । এদিকে আমাদের ভারত সরকার “ব্লক চেইন টেকনোলজি” এর সাহায্যে নিজস্ব “ডিজিটাল মুদ্রা” চালু করার উদ্যোগ গ্রহন করেছে । এই মুদ্রার হাত ধরেই আগামি দিনে বহুমুখী বিশ্ব-ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে ।

টেকনোলজির আবিষ্কারে আমরা কোন কোন বিষ্ময়ের মুখোমুখি হতে চলেছি  ?  

আমরা ইতোমধ্যেই “In Vitro Fertilization” এর মাধ্যমে সফলভাবে সন্তান দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল । আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি মানুষের “জিন ম্যাপিং “ প্রায় শেষের পথে । এই জিন থেরাপির কাজ শুরু হয়ে গেছে । চিকিৎসা জগতে এর প্রয়োগ অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে । ব্যাপক পরিমাণে মহাকাশ অভিযান করছে দেশগুলি । তার বিহীন বিদ্যুৎ , তার বিহীন ইন্টারনেট ডেটা কিছুদিনের মধ্যেই সম্ভব হবে । ক্যানসারের অস্বাভাবিক কোষবৃদ্ধির কারণকে অনুসন্ধান করে মানুষ অমরত্বের চাবিকাঠি হাতে পেতে চাইছে । ক্লোনিং বিজ্ঞান সফল হয়েছে । চিকিৎসার জগতে এই ক্লোনিং বিজ্ঞান মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রিপ্লেসমেন্ট করতে পারবে অনতিদূর ভবিষ্যতে । মানুষ HAARP ( High Frequency Active Auroral Research Programme ) এই প্রযুক্তিকে রেডিও তরঙ্গকে  কাজে লাগিয়ে পরিবেশ প্রকৃতি বায়ুমন্ডল সম্পর্কে উন্নততর জ্ঞান লাভ করছে ।  জিও-সেন্সিং এর মাধ্যমে চাষের মাটি , অনুজীবের উপস্থিতি , মাটির প্রকৃতি , ফসলে সমস্যা এসব চাষাবাদে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিতে পারে ।

উপসংহারে পরিসংহার

মানুষের বুদ্ধির বিকাশ ঘটেছিল তার কৌতুহল বা অনুসন্ধিৎসা থেকে । মানুষের শারিরীক গঠন এবং বুদ্ধিবৃত্তীয় বিকাশ সেইরকম ভাবেই বিকশিত হয়েছে এই দুলক্ষ বছর ধরে । মানুষ দল বেঁধেই বনের প্রাণী আর প্রকৃতিকে জয় করে এসেছিল যুথবদ্ধতার মধ্য দিয়ে । কিন্তু প্যালিওলিথিক যুগে পশুপালনের পরের কালে যখন কৃষি সভ্যতার জন্ম দিল তখনই মানুষের সমাজে প্রকৃত অর্থেই অসভ্যতার সূচনা হল । মানুষের জীবনে পর্যাপ্ততা , সমৃদ্ধি আর নিরাপত্তা এসেছে সত্যি কিন্তু উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য আনার জন্যে বেনিয়ারা প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন এক সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেল । মুনাফার অর্থনীতির তাড়নায় অপ্রাকৃতিক এক সিনথেটিক সভ্যতার জন্ম দিল বেনিয়াদের অর্থনীতি, বেনিয়াদের বিজ্ঞান , বেনিয়াদের প্রযুক্তি । মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ককে সে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে । আর এই প্রকৃতি-বিচ্ছিন সভ্যতার মাশুল দিতে হচ্ছে মানুষ,প্রাণীকুল আর উদ্ভিদ জগতকে । তাই “অরণ্যে ফিরে যাওয়া নয় , অরণ্যকে সাথে করে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে আমাদেরকে আত্ম-বলিদান দিতে হবে ।

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Posts

  • ভোঁতা পাথর থেকে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, মস্তিষ্ক দখলের যাত্রাপথে হাতিয়ারের ভূমিকা
  • তালিবান ও নারী
  • কবিতার ভ্রূন
  • কমফোর্ট ওমেন এবং সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা
  • জু লিঝি: একজন চীনা শ্রমিক কবি যিনি পুঁজিবাদী মুনাফার শিকার হয়েছিলেন-

Recent Comments

  1. Rabi Roy on জু লিঝি: একজন চীনা শ্রমিক কবি যিনি পুঁজিবাদী মুনাফার শিকার হয়েছিলেন-
  2. Manusherkotha2022 on পিতৃতন্ত্রে পুরুষ মানুষ হত
  3. Manusherkotha2022 on পিতৃতন্ত্রে পুরুষ মানুষ হত
  4. Anup Chakrabarty on রবিশ কুমারদের সরিয়ে দিয়ে কি মানুষের কন্ঠরোধ করা যায় ?
  5. সুব্রত মজুমদার on পিতৃতন্ত্রে পুরুষ মানুষ হত

Archives

  • January 2023
  • December 2022
  • October 2022
  • September 2022
  • July 2022
  • May 2022
  • February 2022

Categories

  • golpo
  • Photography
  • Uncategorized
  • কবিতা
  • প্রবন্ধ
© 2023 Manusher Kotha | Powered by Minimalist Blog WordPress Theme