নারীর শিক্ষার অগ্রগতির সাথে সাথে কি তার অবস্থানের কিছু পরিবর্তন হয়েছে ? আগেও যেমন নারীকে তার রূপ সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে হত যত্ন করে , এখনও সেই ভাবেই প্রায় তুলে ধরতে হয়, তবে তার গতিবিধির পরিধি বেড়েছে , যেমন ,লেখাপড়া, সংস্কৃতি চর্চা , লড়াইতে অংশগ্রহন, সামাজিক প্রতিষ্ঠা এই সব । তবে সবটাই সেই এক পরিণতির দিকে চেয়ে ।আমি অনেক শিক্ষিত ও তথাকথিত আলোকপ্রাপ্তা নারীকে বলতে শুনেছি আমার উনি ভীষন উদার মনস্ক ,আমার কোন ব্যপারেই হস্তক্ষেপ করে না তার মানে কি এটা বলার অপেক্ষা রাখে যে তার উনির এই অধিকার আছে হস্তক্ষেপ করার কিন্তু করে না তার মহতী গুণের( ? ) জন্য । এই যে নিজের সম্বন্ধে কৈফিয়ত তা তো শৃঙ্খলিত ভাবনারই প্রকাশ ! আসলে নারী দৈহিক ভাবে নয় মানসিক বা চেতনাগত ভাবে দুর্বল । পুরুষ প্রাধান্যের পিতৃতন্ত্র নিজের স্বার্থে লিঙ্গ-অনুসারে পরিকল্পিত ভাবে নির্মাণ করেছে নারীপুরুষের ব্যক্তিত্বকে। নারীপুরুষের নারীত্ব ও পৌরুষত্ব কোনো সহজাত ব্যাপার নয়, যদি ধরে নেওয়াও হয় যে পেশিতে পুরুষের অধিকার জন্মগত, তা বলে পেশিশক্তি কোনো রাজনীতিক বা সাংস্কৃতিক প্রাধান্যের ভিত্তি হতে পারে না। নারীপুরুষ মেয়েলি বা পুরুষালি গুণ নিয়ে জন্ম নেয় না , জন্মের পরে সমাজ-সংস্কৃতির চাপে তারা অর্জন করে এই ভিন্ন লৈঙ্গিক ব্যক্তিত্ব। এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ-সংস্কৃতি-সভ্যতার ব্যবস্থায় নারী ও পুরুষ হয়ে ওঠে দুই ভিন্নমাত্রিক সংস্কৃতি জগতের অধিবাসী। তাই পুরুষের পৌরুষ আর নারীর নারীত্ব বা মেয়েলিপনা জৈবনিক নয় । এখানেই ঘটে ইতিহাসের নির্ধারিত বন্দোবস্তে বৈষম্যের লিঙ্গ নির্মাণ । পিতৃতন্ত্রের সৃষ্টি করা সংস্থাগুলির মধ্যে প্রধান হচ্ছে পরিবার, যেখানে নারীর উপর রাষ্ট্রিক বিধিনিষেধের মাধ্যমে নারীকে অবদমিত করে পুরুষ কতৃত্বের বংশানুক্রমিক সম্পদরক্ষার একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা । পরিবার অনেকটা পিতৃতান্ত্রিক রাষ্টের ভেতরে অনু-রাষ্ট্র যার প্রধান হয় পুরুষ । সেখানে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটলেও সমাজ বা রাষ্ট্র-সংস্কৃতি থেকে যায় পিতৃতান্ত্রিক । আইনসঙ্গত কিছু নাগরিক অধিকার সেখানে দেওয়া হয় নারীদের, কিন্তু টিকে থাকার জন্যে সমস্ত কর্তৃত্ব পরিবারের প্রধান পুরুষটিকেই দেওয়া হয়েছে এবং তা ধর্মীয় বিধানের সাহায্যে বিধিবদ্ধ ও আইনসিদ্ধ করা হয়েছে । পৃথিবী জুড়ে নারী এখনো শিক্ষা থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে আর যারা শিক্ষা পাচ্ছে, তারাও ঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাব চেতনা বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে । নারী মুক্তির চিন্তা ভাবনার আরও কিছু ধারণা সংযোজন করলে আরও এগোনো যাবে । শিক্ষার নামে নারীদের যা দেওয়া হয় তা কেবল অক্ষর জ্ঞান, অঙ্ক, ভাষা শিক্ষা, ইতিহাসে রাজা-রাজরার কীর্তি, বিজ্ঞানের সাধারণ জ্ঞান এসবই। এর সাথে মানবমুক্তি, নারীমুক্তির চেতনা বিযুক্ত করে রাখা হয়েছে ।
মিলি মুখার্জী